haribansa puran

হরিবংশ পুরাণম

নিবেদন

প্রায় দুই দশকেরও কিছু আগে আমি মহারাষ্ট্রের পুণে শহরে BHANDARKAR INSTITUTE -এ মহাভারতের মূল সংস্কৃত পাঠ্যের খণ্ডগুলি সংগ্রহ করতে যাই। তখন আমাকে মূল চারটি খণ্ড ছাড়াও অতিরিক্ত পঞ্চম খণ্ডটি কেনার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছিল। সেটি ছিল “হরিবংশ” যাকে বলা হয় মহাভারত-এর খিলভাগ বা পরিশিষ্ট অর্থাৎ Supplement to the MAHABHARATA.
সময়ের অভাবে এবং এই বিশেষ গ্রন্থটি সম্বন্ধে কোনও আগ্রহ না থাকার কারণে আমি নিজের অন্যান্য লেখা সংক্রান্ত কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এরপর একে একে Samsad COMPANION TO THE MAHABHARATA, Samsad COMPANION TO THE RAMAYANA এবং ছয়শো মহাকাব্যিক নারী চরিত্রের সংকলন “মহাকাব্যে চিরন্তনী” নামে তিনটি বই প্রকাশিত হল।

বিগত কয়েক বছর ধরেই কয়েক জন প্রখ্যাত ভারত-তত্ত্ববিদ বা Indilogist আমাকে হরিবংশ-এর ওপর একটি সহায়ক গ্রন্থ রচনার জন্য বিশেষ ভাবে অনুপ্রাণিত করতে থাকেন। কারণ এটি এখনও পর্যন্ত অনেকটাই উপেক্ষিত রয়ে গিয়েছে। এরপর এক সময় আমি কৌতুহলবশত বইখানি পড়তে শুরু করি। রীতিমত আশ্চর্য হয়ে বুঝতে পারি এটি যথার্থভাবেই একাধারে এক বিস্ময়কর ও রোমাঞ্চকর জ্ঞানের ভাণ্ডার। এর রহস্যময় জগতে পা রেখে আমি অনেক চিরন্তন প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাই।

‘হরিবংশ’ আমাদের জানায় প্রতিটি নতুন সূচনার জন্য বর্তমানের লয় অপরিহার্য। আরও জানতে পারি কোনও জীবিত প্রাণীই মৃত্যুকে অতিক্রম করতে পারেনা। এমনকি তথাকথিত অতিমানবীয় কোন অস্তিত্বও নয়। শুধুমাত্র সর্বশক্তিধর ‘পরমআত্মন’, যার কোনও শুরু নেই শেষও নেই, সে-ই অক্ষয় অবিনশ্বর। তাঁর প্রকৃত রূপ অননুমেয় । জগত- উদ্ধারের কারণে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে তিনি প্রকট হন। তবে ‘হরিবংশ’ অনুসারে পুনর্জন্ম বিশ্বাসনীয়। তাই সৃষ্টিকর্তা হওয়া সত্ত্বেও ব্রহ্মা নিজে একাধিকবার জন্মগ্রহণ করেন। সেই ভাবেই নারদ, বিশ্বামিত্র, বশিষ্ঠ, দক্ষ ইত্যাদি মুনি, ঋষি ও নৃপতিরাও পুনর্জন্ম নিয়েছেন। প্রয়োজনে দেবতারাও জগতের কল্যাণের উদ্দেশ্যে মানবদেহে অবতীর্ণ হতে পারেন। পদ বা অবস্থান স্থায়ী হলেও সেই পদে অধিষ্ঠিত সত্তটি কিন্ত অস্থায়ী। ‘ইন্দ্র’ দেবতাদের অধিপতির পদের স্থায়ী নাম, অস্তিত্ব পরিবর্তনশীল।

চতুর্দশ মনুর অধীনস্থ বহুসংখ্যক যুগ নিয়ে গঠিত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জগতের নিয়ন্ত্রিত রাখার দায়িত্বে থাকা বিশেষ বিশেষ দেবতা ও সপ্ত ঋষির দল প্রতিস্থাপিত হন নব নির্বাচিত দলের দ্বারা।
কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাস রচিত ‘হরিবংশ’ পাঠক্রম অনুযায়ী তিনটি অংশে বিভাজিত — হরিবংশ পর্ব, বিষ্ণু পর্ব এবং ভবিষ্য পর্ব। সম্মিলিত
ভাবে এরা একটি
সংহত রূপের সৃষ্টি করেছে। মহাকাব্যের পরিশিষ্ট অংশ হিসেবে পরিচিত হলেও এই সাহিত্যকর্মটি মূলত সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়- এই কালনির্মান,চতুর্দশ মনুর অধীনস্থ যুগ সমূহ, রাজবংশের উৎপত্তি ও পরম্পরা, অবতার রহস্য তথ্যের পথ বেয়ে একটি মহাপুরাণ-এর পাঁচটি বৈশিষ্ট্যকে অনুসরণ করে চলে। সেই কারণে পণ্ডিতেরা প্রায়শই একে ‘হরিবংশ পুরাণ’ নামে আখ্যায়িত করে থাকেন।

ধ্রুপদী ভারতবর্ষের ইতিহাসে আদিতম দুই প্রধান রাজবংশ ‘সূর্য বংশ’ ও ‘চন্দ্র বংশ’ নামে পরিচিত। এদের উদ্ভব ব্রহ্মার উত্তর পুরুষ কশ্যপের পুত্র বিবস্বান সূর্য এবং অন্যতম মানসপুত্র অত্রির পুত্র সোম বা চন্দ্রের মাধ্যমে। ‘হরিবংশ’ নাম নিশ্চিতভাবেই চন্দ্র বংশের অন্তর্ভুক্ত সম্রাট যযাতির প্রথম পুত্র যদুর উত্তর পুরুষ কৃষ্ণ বাসুদেব অর্থাৎ নারায়ণ-এর অষ্টম অবতার ‘হরি’র বংশধারাকে নির্দেশিত করে।

প্রথম পর্ব হরিবংশ-এর শুরু দেবী সরস্বতীর বন্দনা দিয়ে। এরপর সৃষ্টি-রহস্য, বিভিন্ন জীবকূলের উদ্ভব, বংশধারার পরিচয় ও পরম্পরা, জন্মান্তরবাদ, অবতার তত্ত্ব এবং কৃষ্ণ বাসুদেব-এর জন্মের সূচনা বিস্তারিতভাবে দর্শিত হয়েছে।

‘বিষ্ণুপর্ব’ কৃষ্ণের জন্ম ও জীবনধারা, মহাভারত-যুদ্ধের পূর্বকাল পর্যন্ত কীর্তিকলাপ এবং সংশ্লিষ্ট চরিত্রগুলির ব্যাখ্যা করেছে।
‘ভবিষ্য পর্ব ‘ রচিত হয়েছে অনাগত ভবিষ্যতকে কেন্দ্র করে।

আমার প্রাথমিক পদক্ষেপ ‘হরিবংশ পর্ব’ -এর নির্ধারিত ক্ষেত্রে। পরিক্রমাও এই পর্বটিকে ঘিরেই। উদ্দেশ্য কিছু অকথিত অজানা রহস্যের উপস্থাপন।